সারাহ ম্যাকব্রাইড, প্রথম ট্রান্সজেন্ডার সিনেটর!

0
132

২০২০ সালের মার্কিন নির্বাচনটি নানা ভাবেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে।
তার একটি হল, এই নির্বাচনে মার্কিনীরা প্রথম বারের মত একজন রূপান্তরকামী কে সিনেট সদস্য হিসেবে নির্বাচিত করে, ইতিহাসের পাতায় সমতার একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দেশটির ডেলাওয়ার প্রদেশ থেকে সিনেটে যাচ্ছেন রূপান্তরকামী সারাহ ম্যাকব্রাইড। ৯০ এর প্রজন্ম, বয়সে একেবারেই নবীন এই সিনেটর, তার প্রতিপক্ষ রিপাবলিকান প্রার্থী স্টিভ ওয়াশিংটনকে, ভোটে হারিয়ে নির্বাচিত হন। বাইডেন, এর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল, ভোটে জিতলে ‘সাম্য আইন’–নামের আইনটি, ১০০ দিনের মধ্যে কার্যকর করবে, সেই মতকেই সমর্থন করেছেন সারাহ।
ডেলাওয়ারে লিঙ্গ বৈষম্য বিরোধী লড়াই ও নারী অধিকারের লড়াইয়ে সামনের সারিতে ছিলেন সারাহ। ইতিপূর্বে তিনি ওবামা প্রশাসনে হোয়াইট হাউজে শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৬ সালে ডেমোক্র‌্যাটিক পার্টির কনভেনশনে প্রথম রূপান্তরকামী হিসাবে বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও জাতীয় মানবাধিকার প্রচারের প্রেস সেক্রেটারি হিসাবেও কাজ করেছেন তিনি।

বিজয়ী হয়ে আপ্লুত সারাহ, তার টুইটার একাউন্টে উচ্ছ্বাসপূর্ণ টুইটে লিখেছেন,
“আমি প্রচণ্ড আশাবাদী, আজ রাতে এলজিবিটি কমিউনিটির শিশুরা দেখবে আমাদের জন্য যথেষ্ট গণতান্ত্রিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”

সারাহ সিনেটর হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন অনেকেই। এর মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রের হিউমেন রাইটস ক্যাম্পেইনের প্রেসিডেন্ট আলফনসো ডেভিড এক বিবৃতিতে বলেছেন,
“ সারাহ দেখিয়েছে যে, যেকোনো ব্যক্তি তার স্বপ্ন অর্জন করতে পারে। লৈঙ্গিক পরিচয় বা যৌন সংসর্গ কোনো সমস্যাই নয়। আজকে সারাহ কেবল নিজের জন্য ইতিহাস গড়েননি, আমাদের পুরো সম্প্রদায়ের জন্য ইতিহাস গড়েছেন। একজন প্রতিনিধি ও মুখপাত্র হিসেবে তিনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কথা তুলে ধরবেন। এই জয় তার ক্যারিয়ারের অনেক কিছু বলে আমি মনে করি“

এই নির্বাচনে বিপুল পরিমাণ নারী প্রার্থীদের সঙ্গে সঙ্গে এবার রেকর্ড গড়েছেন সমকামী, উভকামী, রুপান্তরকামী ও তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীরা। প্রায় ১ হাজারের বেশি এলজিবিটি প্রার্থী বিভিন্ন পর্যায়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন। ২৬ বছরের তরুণ টেইলর স্মল, ভারমন্ট অঙ্গরাজ্যের হাউজ অফ রিপ্রেজেন্টেটিভের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন, একই সাথে ক্যানসাস অঙ্গরাজ্য থেকে আইন প্রণেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়ে ইতিহাসের অঙ্গ হয়ে গেলেন স্টেফানি বেয়ারস। ওকলাহামা অঙ্গরাজ্য থেকে তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থী মাউরি টার্নার আইন প্রণেতা নির্বাচিত হয়েছেন।

কৃষ্ণাঙ্গ কংগ্রেস প্রার্থী এবং প্রকাশ্যে এলজিবিটি অধিকার আন্দোলনের সমর্থক মনডায়ার জোন্স এবং রিচি টোরেস নিউ ইয়র্ক থেকে নিজ নিজ আসনে বিজয়ী হয়েছেন।
এলজিবিটি ভিক্টরি ফান্ডের মুখপাত্র আনিস পার্কার, পিংক নিউজকে বলেন,
“মনডায়ার জোন্স এবং রিচি টোরেস রেইন বো আন্দোলনকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা ইতিপূর্বে কখনো যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে আইনসভায় উত্থাপিত হয়নি, কিন্তু এখন এই মানুষগুলোর পক্ষে কথা বলার প্রতিনিধি আছে।”

এক ঝাঁক তরুণ আইন প্রণেতার মধ্যে আছেন নর্থ ক্যারোলিনা থেকে সদ্য নির্বাচনে জয়ী হওয়া রিপাবলিকান প্রার্থী ম্যাডিসন কাউথর্ন। নিজের যৌন পরিচয়ের কারণে তিনি নির্বাচনের প্রচারণার সময় যৌন হেনস্তার শিকার হন।
সব মিলিয়ে মার্কিনীরা যে মানুষের সম অধিকারের দিকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে, তার প্রমান দিচ্ছে এই ২০২০ সালের নির্বাচন। ভবিষ্যৎই বলে দেবে এই নির্বাচিতরা তাদের কর্তব্য পালনে কতটা যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন।