আমার বেশ্যা মন

0
99

একটা সময় মনে হত হৃদয় শুধু এক জনের জন্য বরাদ্দ বলে অন্য কার সেখানে স্থান হতেই পারে না । শুধু নায়ক , গায়কদের বিষয়ে ক্রাশ শব্দটা উচ্চারণ করলে, নিয়ম খানিটা শিথিল যোগ্য তবে সেটাও প্রেমিকের অনুমতি সাপেক্ষে। অন্তত ষোড়শীতে তাই ভাবতাম । তাই প্রথম বিরহটার রেষ কাটতে বহুদিন লেগেছে । এরপর আবার প্রেমে পরলাম তখন মনে হল যাক , আগেরটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল এবার সত্যি সত্যি বুঝি রূপকথার রাজপুত্র তার পঙ্খিরাজে উড়য়ে নেবে। কিন্তু সে আশা মরীচিকা হল, সেই সাথে ‘ আমার হৃদয় শুধু তার’ ! এই বিশ্বাসে ফাটল ধরা শুরু করল । এরপর সময় গড়াল আর পুরাতন বিশ্বাস ভেঙে জন্ম নিতে থাকল নতুন নতুন উপলব্ধি । একদিন হুট করেই বুঝে গেলাম, প্রেম খুব স্বাভাবিক বিষয়। মন ভাঙলে জোরা লাগে না, এসব ফালতু কথা । মন ঠিকঠিক তার অভাব পূরণ করে নেয় শুধু জমে থাকে স্মৃতি ।
আমার প্রিয় স্বামী প্রবরটি ছাড়া যে কখনো কাউকে ভালবাসিনি, সে কথা তো সত্যি না। শুধু কি পুরুষ ? আমি তো নারীর প্রেমেও পড়ি । এই লাইনটা লিখেই মনে হল ব্যাখ্যা না করলে কাল কেউ কেউ ঠিকঠিক লিখে দেবে , আগেই বলছিলাম ক্যামেলিয়া উভয়কামী!
অবশ্য সমকামীদের প্রতি আমার কোন ধরনের এক্সট্রা অনুভূতি নেই, তারা আমার আপনার মত দোষগুণে মানুষ । তাই অন্য কোন বিচার বিশ্লেষণের মধ্যেই আমি নেই । আমি পুরোপুরি স্ট্রেইট । তবে নারীর প্রেম বলতে, কোন নারীর কথার প্রেমে পড়েছি , কার লেখা, কার বা ব্যক্তিত্বের।
এক সুইডিশ লেখিকা আমার চিঠি পড়ে প্রতি উত্তর করেছিলেন , তুমি আমার জন্য একগুচ্ছ কবিতা পাঠিয়েছ । আমি আনন্দিত । তোমার ভালবাসা গ্রহণ করলাম । সেই চিঠি পড়ে আমার ভেতরে ওলট পালট হয়ে একাকার হল।
অবশ্য পুরুষের প্রেমে পড়েছি শুধু তার গুনে না , খানিকটা রেসিস্ট শোনালেও কোন কোন পুরুষের রূপে মুগ্ধ হয়ে যে হার্টবিট মিস হয়নি, তা কিন্তু না । আমার হাসির প্রতি দুর্বলতা আছে। যে ছেলের হাসি সুন্দর তার প্রেমে পড়ার বিশেষ কোন কারন লাগে না । এই তো একবার এক সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে বারে গিয়েছিলাম আড্ডা দিতে । সেখানে হঠাৎ এক ছেলের দিকে চোখ আটকে গেল । ছেলের হাসিতে অদ্ভুত মায়া ছিল । প্রথমে ভাবলাম বাদ দেই, কিন্তু মন বেচারা কোন মতেই মানল না , তাই মস্তিষ্ক পরাজিত হয়ে হৃদয় জিতে গেল । ছেলেটার সামনে গিয়ে বললাম , তোমাকে একটা কথা বলতে চাই , যদি আপত্তি না থাকে ।
ছেলে অবাক দৃষ্টিতে বলল , বল ,
আমি লজ্জিত কণ্ঠে বলে ফেললাম , তোমার হাসি খুব সুন্দর । তোমাকে না বলে থাকতে পারলাম না, তাই বলতে এলাম । ছেলে হেসে ফেলল , ওর সাথে থাকা মেয়েটাও হাসল । সম্ভবত ওর গার্লফ্রেন্ড ।
আধ ঘণ্টা পরে ঐ ছেলের টেবিল থেকে একটা ড্রিঙ্ক এলো আমার টেবিলে , ওটা ওর ধন্যবাদ গিফট ছিল ।
এমন পাগলামি যে আমি কম করি তা কিন্তু না । কদিন আগে এক লেখকের লেখা পড়ে তাকে ইনবক্স করলাম , আপনাকে অভিনন্দন , খানিকটা সময় হলেও আমাকে বিপদে ফেলার জন্য ।
ভদ্রলোক ভয় পেয়ে উত্তর দিলেন কি বিপদ ?
বললাম আপনার লেখাটা একজন ব্যক্তিত্ববান সুদর্শন পুরুষের মত আকর্ষণীয় । আমি লেখাটার প্রেমে পড়েছি । ভদ্রলোক যথেষ্ট সেন্সেবল মানুষ , তিনি চমৎকার একটা প্রতি উত্তর করেছিলেন । যেহেতু ওনার অনুমতি নেইনি তাই উত্তরটা এখানে লিখলাম না ।
মন এমনিতেই বহুগামী হয়। এই কারনে মনের স্বাধীনতার পরিধি এত বেশী । আমি আমার বেশ্যা মনের কাছে খানিকটা ঋণী । ওর কারনে হার্টবিট মিস হবার অনুভূতি কখনো কমে না । একদিন বুড়ো হব , মনও ক্লান্ত হবে তখন আর প্রেমে পড়ার অবকাশ হয়ত নাও পেতে পারি ।
আমি নিয়মিত প্রেমে পড়ি । বয়স , জাত , ধর্ম , লিঙ্গ , বর্ণ কিছুই আমাকে প্রভাবিত করে না । ঠিক যৌন আকর্ষণ নয়, স্রেফ তীব্র থেকে তীব্র ভালবাসা বোধ করি । কখনো সাময়িক , কখনো সেটা দীর্ঘ হয় । কখনো এই দীর্ঘ সময় উপভোগ করি কখনো কষ্টও হয় । ভালবাসা যেখানে আছে সেখানে বিরহ থাকবে না, সে কি করে হয় । আমার ভালবাসারা বেশীর ভাগ সময় এক তরফা । কখনো কার ভালবাসা দেখে মুগ্ধ হয়ে থমকে যাই। মাথা নত করে বলি আমাকে ভালবাসার জন্য ধন্যবাদ । তারপর আপন পথ ধরি।
আমার স্বামী প্রবর বেশ ভাল করেই জানে আমি কি কি করি । তাই প্রায়ই রসিকতা করে । আমিও মাঝে মাঝে ছোটখাটো থ্রেট দেই , বলি দেখিস একদিন তোকেও কেউ ছাড়িয়ে যাবে । শুভ হাসে । ও বলে ঘুড়ি কখনো আকাশ ছাড়ায় না বড়জোর মেঘের সাথে তার হাসি বিনিময় হয় । তবুও একটু ভয় থাকুক । জানুক আমাকে জয় করা সহজ না ।