কেন এই প্রজন্মের মগজে এত ঘৃণা | ট্রল প্রজন্মের দায় কার

0
67

ফেবুতে দুটা টপিক ঘুরছে, একটা হল, নাসির আর তার সদ্য বিয়ে এবং আর একটা টপিক হল, এক্স প্রেমিকার শোকে একটা ছেলের আত্মহত্যা।এই খবর সংক্রান্ত লক্ষ লক্ষ পোষ্ট কমেন্ট। একদল তামিমা কিংবা নাসির কে সামনে পেলে এদের আগুন দিয়ে জ্বালায় দিত আর একদল আত্মহত্যা করা ছেলেটার এক্স প্রেমিকা কে স্রেফ খুন করে ফেলত। এবং আশ্চর্যের বিষয় হল, এই ছবিগুলোর নিচে ট্রল করা, গালি দেয়া, এমন কি খুন করার নানা টেকনিক বর্ণনা করটাই, তাদের কাছে বিনোদন !

 

একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি, ধরুন আপনি বাংলাদেশ সম্পর্কে কিছুই জানেন না। আপনি বাংলাদেশ সম্পর্কে জানতে গুগোলে সার্চ করলেন, সুপার স্টার বাংলাদেশ।দেখবেন হিরো আলোমের নাম প্রথমে আসে। আপনি ইউটিউবে গিয়ে দেখে আসলেন হিরো আলম কি করে ! এরপর বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনার ধারণা কি হবে সেটা নিশ্চই বলার অপেক্ষা রাখে না।

আপনি এই ট্রল প্রজন্ম কে দোষ দিতেই পারেন, বলতে পারেন এরা ট্রল করে হিরো আলম কে গুগোলের র‍্যাঙ্কিং এ নিয়ে এসেছে। কিন্তু এই প্রজন্ম বানালো কারা ? কারা এত ঘৃণা ভরে দিয়েছে এই প্রজন্মের মগজে ?

গত ১০ বছরে একজন নতুন সঙ্গীত শিল্পী, একজন নতুন লেখক,একজন নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীর নাম বলেন, যাকে আপনার কিংবদন্তির সাক্ষী হয়ে থাকবে বলে মনে হয়েছে ?

শরিয়ত সরকার এর মত বয়াতিরা যে দেশে জেলে থাকে, মোশারেফ করিমদের মাপ চাইতে হয়, কার্টুন আকার অপরাধে জেলে পচতেছে কার্টুনিস্ট কিশোর, আই সি টি এক্ট দিয়ে কথা, লেখা , আঁকা, গাওয়া , বন্ধ করে দেয়া হয় , যে দেশে এন্ড্রো কিশোর এর জন্য দোয়া করা যাবে না , যে দেশে লেখকের মগজ রাস্তায় পড়ে থাকে, যে দেশে,মাহফুজুর রহমান গায়ক, ফুটন্ত গোলাপ এর মত বই জনপ্রিয়, অপু ভাইরা নতুন প্রজন্মের আইকন , হিরো আলমরা স্টার আইকন, সে দেশে বিবেকবান মানুষ কেন তৈরি হবে বলেন?

এই দেশের এই প্রজন্ম কে ন্যায় নীতি , মোড়ালিটি , ভুল সুদ্ধ শেখাবে কারা ? এদের সামনে আপনি কোন আইকন রাখতে পেরেছেন যাদের দেখে এরা মোড়ালিটি শিখবে ?

 

১৬ বছরের সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ যে, পৃথিবীকে বাঁচাবার জন্য লড়ছে, সে কিন্তু এক দিনে এমন হয়নি। সে তার চারপাশ থেকে শিখেছে কেন পরিবেশের যত্ন নেয়া জরুরী, তার সামনে প্রচুর আইকন রেখে দিয়েছে সুইডিশ সোসাইটি।

আপনি যে কোন সুইডিশ বাচ্চার সাথে আলাপ করলেই জানবেন, সে কি অনায়াসে নিজের ভুল স্বীকার করে সরি বলে, বাচ্চা আপনার সামনে ভুল কিছু করলে সে এবং তার বাবা মা সব সহ লজ্জিত হয়। ওরা এগুলো শেখে ১ বছর বয়স থেকে যখন প্রি স্কুলে যায়।

আপনি একটা একটা সুইডিশ বাচ্চার খেলনা ও খেলা সম্পর্কে খোঁজ নিলে দেখবেন , ওরা প্ল্যাস্টিকের স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে একটা খেলনা গাড়ি এসেম্বেল করা কে খেলা হিসেবে শেখে , ওরা কাঠ দিয়ে বাবা মা এর সাথে চেয়ার টেবিল বানানো শেখ। ওরা খেলতে খেলতে শেখে ট্রাফিক রুলস কিভাবে মানতে হয় , কিভাবে লাইনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে হয় , কি করে সময়ের কাজ সময়ে করতে হয় । এগুলো এমনিতে হয়নি। এরা সেই পরিবেশ পেয়েছে,পাচ্ছে।

 

আপনি একটু খেয়াল করলেই বুঝবেন, গুণীরা জন্মায় না , গুণী তৈরি করে সমাজ, পরিবার, সেই দেশের লেখক , শিল্পী , সাহিত্যিক কবি, বুদ্ধিজীবীরা আর সেই দেশের সংস্কৃতি তথা অনুকূল পরিবেশে। যে কোন কিছুই বেড়ে ওঠার জন্য একটা অনুকূল পরিবেশ লাগে। যেমন গ্রেটা এমন পরিবেশে পেয়েছে বলেই তার ভেতরের পরিবেশবাদী সুস্থ চিন্তার বিকাশ এত প্রবল ভাবে হয়েছে।

আর আমদের পরিবেশে তৈরি হচ্ছে, ভয়ংকর ট্রল প্রজন্ম । মেধার চর্চা এদের শেখাবে কে ? আপনি যদি বিনোদনের জন্য বই, সিনেমা, গান, গল্প, কবিতা এদের দিতে না পারেন, আপনি যদি মোড়ালিটি ন্যায় নীতির আইকন এদের সামনে উপস্থাপন করতে না পারেন। তবে এরা গারবেজ কে আদর করে ধারণ করবেই।

আপনি নিজেও কি এর দায় এড়াতে পারেন ?

আপনি হিরো আলমের মিমস শেয়ার করেন কিন্তু একটা বিজ্ঞান ভিত্তিক ভিডিও শেয়ার করেন না । তাহলে কিভাবে আপনার নিজের চারপাশ থেকে সুদ্ধ চিন্তা আর জ্ঞানের বিকাশ আশা করেন ?

এই প্রজন্ম কে গালি দেয়া যায় , কিন্তু গালি দেয়ার আগে নিজের দায়টাও স্বীকার করেন। ১০টা মিমস শেয়ার দিলে লাইক বেশি আসে কিন্তু এই লাইকে আপনার সমাজ বদলাবে না। তাই ১০টা মিমসের সাথে ৫টা বিজ্ঞান ভিত্তিক ভিডিও শেয়ার দেয়ার চর্চা করেন।

 

প্রজন্ম কে গালি দেয়া যায় কিন্তু তার আগে ভাবেন আপনি এই তাদের সুস্থ চিন্তার জন্য কি করছেন ? করছেন কিংবা করবেন ?