বিয়ে ছাড়াই একসঙ্গে বসবাস করা যাবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে!

দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ডব্লিউএএম নিউজ এজেন্সি ও সংবাদপত্র দ্য ন্যাশনালের মতে, আইনি এ সংস্কারের ফলে প্রাপ্তবয়স্ক প্রেমিক যুগলের জন্য লিভ-টুগেদারে নিষেধাজ্ঞা, অ্যালকোহল ও অ্যালকোহল জাতীয় পণ্য ঘরে রাখা কিংবা কেনা-বেচার ক্ষেত্রে লাইন্সেস বহনের মতো বিষয়গুলোতে আইনি জটিলতা অনেকটা লাঘব  হলো।

1
610

গত শনিবারে  সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইইউ) ইসলামি আইনে বেশকিছু শিথিলতার ঘোষণা দেয়।

এখন থেকে বিয়ে ছাড়াই একসঙ্গে বসবাস করার  ক্ষেত্রে আর কোনও বাধা থাকছে না সংযুক্ত আরব আমিরাতে। এমনকি মদ্যপানের ক্ষেত্রেও তারা তাদের আইনে অনেকটা  শিথিলতা এনেছে। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ডব্লিউএএম নিউজ এজেন্সি ও সংবাদপত্র দ্য ন্যাশনালের মতে, আইনি এ সংস্কারের ফলে প্রাপ্তবয়স্ক প্রেমিক যুগলের জন্য লিভ-টুগেদারে নিষেধাজ্ঞা, অ্যালকোহল ও অ্যালকোহল জাতীয় পণ্য ঘরে রাখা কিংবা কেনা-বেচার ক্ষেত্রে লাইন্সেস বহনের মতো বিষয়গুলোতে আইনি জটিলতা অনেকটা লাঘব  হলো।

 

এছাড়া পারিবারিক নির্যাতনের ক্ষেত্রে পুরুষদের যে একচ্ছত্র ভূমিকা ছিল-তারও পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে দেশটিতে নির্যাতনের প্রতিবাদস্বরূপ পরিবারের পুরুষ সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলাও করতে পারবেন নারীরা। দেশটির  মানবাধিকার এবং সোশ্যাল  সংগঠকরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাবার সাথে সাথে তারা এও বলছেন , আরব আমিরাত মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা কে সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে গেল । দেশটির চলচ্চিত্র নির্মাতা আবদুল্লাহ আল কাবি যিনি  বহুবছর ধরে জেন্ডার ও সমকামীদের নিয়ে কাজ করছেন ,  তিনি  উচ্ছ্বাসিত মন্তব্যে বলেন ,

“প্রগতিশীল ও প্ররোচক সংস্কারগুলোর কারণে এর চেয়ে বেশি খুশি হওয়া সম্ভব নয়।”

আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইন ও বিনিয়োগ ব্যবস্থাকে আরও সহজলভ্য করার ওপর জোর দিচ্ছে দেশটির সরকার। সেজন্যই ঢালাওভাবে এ আইনি সংস্কার করেছে তারা।

আরব বিশ্বে এই পরিবর্তনের ঢেউ  স্বয়ং সৌদি আরবেও দেখা যাচ্ছে। সৌদি সরকারের করা নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিয়ের প্রমাণ ছাড়াই বিদেশি নারী ও পুরুষ পর্যটক এক রুমে থাকতে পারবেন৷ এছাড়া বিদেশী নারীরা এখন তাদের পরিচয়পত্র দিয়ে হোটেল বুক করতে পারবেন৷ সৌদি নারীদের জন্যও আইন কিছুটা শিথিল করেছে সৌদি সরকার৷ যেমন, এখন থেকে সৌদি নারীরা কোনো অভিভাবক ছাড়া নিজেরাই হোটেল বুকিং করতে পারবেন৷ সেক্ষেত্রে তাদের পরিচয়পত্র দেখালেই হবে৷ আগের নিয়ম অনুযায়ী কোনো সৌদি নারী,  অভিভাবক ছাড়া হোটেল বুক করতে পারতেন না৷ সৌদি তে  ২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়া  হয়  এবং কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই বিদেশ ভ্রমণের সুযোগও পাচ্ছেন নারীরা ।

সব দিক থেকে বিবেচনা  করলে আরব বিশ্বের এই পরিবর্তন খুবই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু এই পরিবর্তনের কারন তাদের  উদারতা কিংবা রাতারাতি মানসিকতা বদলে যাওয়া ভাবলে ভুল হবে, এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার প্রয়াস। ব্যাখ্যা করছি,

এই বছরেই মুসলিম-দেশগুলোর সব চেয়ে বড় শত্রু  ইসরায়েলের সঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাত শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর পর পরই আরব আমিরাত কে  অনুসরণ করল বাহরাইন। তারা  মাত্র কদিন আগেই  ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক পুরোপুরি স্বাভাবিক করার ঘোষণা দিয়েছে। এই দিকে সৌদি আরব যে তার মিত্র দেশগুলোর পথেই হাঁটবে সে আভাষ  পাওয়াই  যাচ্ছে। অবশ্য এ  ছাড়া সৌদির তেমন কোন উপায়ও নেই।  সৌদি আরব জানে,  তেল আজীবন থাকবে না, থাকলেও তেলের বাজার মূল্য কমবে। ইউরোপের অনেক-গুলো  দেশ এবং ইংল্যান্ড ঘোষান দিয়েছে তারা পরিবেশ রক্ষায় তেলে চালিত যানবাহন বর্জন করবে। সেক্ষেত্রে বলার অপেক্ষা রাখে না যে,  তেলের চাহিদা কমে যাবে । আর ইউরোপ তেল নেয়া বন্ধ করলে  তেলের ওপর নির্ভর করে সৌদি  রাজত্ব চালবে না। দেশটিতে বেকারত্বের সমস্যাও বাড়ছে। সব মিলিয়ে  অর্থনীতি সচল  রাখতে আমেরিকা ও পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্বাসভাজন হয়ে ওঠার বিকল্প নেই তাদের হাতে। তাই রক্ষণশীল নিয়ম শিথিল করে বর্তমানে  তারা তাদের নারীদের নানা পেশায় অংশগ্রহণের দিকে মনযোগী হয়েছে। পশ্চিমা  টুরিস্ট  আকর্ষণের পদক্ষেপ হিসেবে বার, ক্যাসিনো, ন্যুড বীচ সহ নানা ধরণের বিনোদন কেন্দ্রের আয়োজন করছে। সেই সাথে শত্রু দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টাও শুরু করেছে তারা।

 

অন্যদিকে ইরানের সাথে সিরিয়া, ইরাক, লেবানন, তুরস্ক ও সম্ভবত কাতারের যে সম্প্রতি গড়ে উঠেছে, সেটাও সৌদি আরবের জন্য হুমকি হয়ে উঠছে। আবার ঐদিকে ২০১৮ সালে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগজিকে হত্যা করার ঘটনা নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষ সমস্ত বিশ্বে ব্যাপক ভাবেই নিন্দিত হয়েছিল, বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের যথেষ্ট চাপ নিতে হয়েছে সৌদি আরব কে।  সেক্ষেত্রে তাদের ইমেজ পুনরুদ্ধারের পথ  একটাই খোলা ছিল, তা হল  তাদের উদার নীতির প্রদর্শন এবং সেটাই তারা করার চেষ্টা শুরু করেছে।

 

সব মিলিয়ে তাদের কট্টর ও রক্ষণশীল সমাজ ও মানবাধিকার পরিপন্থী আইনগুলো সংস্কার হচ্ছে । হয়ত আধুনিক সমাজ গড়তে তাদের  অনেকটা পথ যেতে হবে,  তবুও বাংলাদেশে যখন ধর্মীয় অনুভূতির নামে  মানুষ হত্যার সূচনা হচ্ছে,  ঠিক তখন আরব বিশ্বের উদার নীতির সূচনা নতুন আশার সঞ্চার করে।

 

১ টি মন্তব্য

কমেন্ট বন্ধ করা হয়েছে