নারীর যৌন চাহিদা কি পুরুষের থেকে কম ?

এবার আসি একটা কমন অভিযোগ নিয়ে, রিসার্চ এর সময় আমাকে কতগুলো বাঙালী এমেচার ভিডিও থেকে ডাটা কালেক্ট করতে হয়েছে, অবাক হয়েই দেখলাম সেখানে বেশির ভাগ মেয়েই খুব নিষ্ক্রিয়। মাথায় প্রশ্ন ঢুকে গেল, তাহলে কি বাঙালী মেয়েরা  সঙ্গমের সময় পুরুষের তুলনায় কম উত্তেজিত থাকে?

1
1603
নারীদের যৌন চাহিদা

যৌন চাহিদা খুব স্বাভাবিক একটি জৈবিক চাহিদা। নারীর যৌন চাহিদা কি পুরুষের থেকে কম?  কিংবা নারীর যৌন উত্তেজনা কি কম? এই প্রশ্নের উত্তর দেবার আগে বলি, কেন নারীদের যৌনতা বিষয়ে আমার আগ্রহ জন্মালো।

গতবছর নরওয়েজিয়ান গভমেন্ট এর একটা রিসার্চ প্রজেক্টে কাজ করছিলাম, বিষয় ছিল, Gender Differences in Sexual Desire। এখান থেকেই আমার আগ্রহ জন্মালো, এই যে বহুল প্রচলিত তত্ত্ব, ”পুরুষের যৌন চাহিদা নারীদের চেয়ে বেশি বলেই তাদের জন্য একাধিক বিয়ে করার বিধান আছে”! এর সত্যতা কতটুকু? আসলেই কি নারীদের যৌন চাহিদা কম?

আজকে থেকে উত্তর জেনে নেন, আপনি এতদিন ভুল জানতেন। মিথ্যা জানতেন। বর্তমানে রিসার্চগুলো প্রমাণ করে দিয়েছে,  মেয়েদের যৌন চাহিদা , পুরুষের থেকে মোটেও কম না। তবে মেয়েদের যৌন সক্রিয়তা কীভাবে কাজ করে সেটা শুধুমাত্র কয়েকটা লাইন দিয়ে ডিফাইন করা সম্ভব না।

এখানে কতগুলো ফ্যাক্ট অবশ্যই বুঝতে হবে। যেমন, মেয়েদের যৌনতায় আগ্রহ নির্ভর করে, পুরুষটি কে এবং কেমন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা কি, সমাজ, সংস্কৃতি, আর যৌনতা উপভোগের ভিন্নতার উপরে। আপনিও নিশ্চয় শুনেছেন,

মেয়েদের শরীরের আগে হৃদয় জাগাতে হয়!

কঠিন মনে হচ্ছে? আচ্ছা তাহলে, পুরো বিষয়টা একটু সহজ ভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছি। প্রথমেই, কীভাবে সমাজ ও সংস্কৃতি একটা মেয়ের যৌনাগ্রহতার উপরে প্রভাব ফেলে, সেটা ব্যাখ্যা করি-

বয়ঃসন্ধি থেকেই আমাদের সমাজের মেয়েরা জেনে যায়, যৌন চিন্তা লজ্জার, এটা অন্যায় এটা পাপ। সেক্স করলে ইজ্জৎ চলে যায়! তাই মেয়েরা যৌন অনুভূতির সাথে পরিচিতই হয় না, তারা বন্ধু বান্ধব, কাছের মানুষের কাছেও এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে না, তারা প্রেম তো করে, কিন্তু যৌনতার বিষয় আসলেই কুকরে যায়।

যেহেতু সমাজ তাদের বলে দিয়েছে, ছেলে মেয়ে দুজনে সেক্স করলে মেয়েটা হয়ে যায় ´ইউজড´, ´সেকেন্ড হ্যান্ড´, তাই মেয়েরা সেক্সটাকে খুব ভয়ংকর ভাবে।

অপর দিকে ছেলেদের ক্ষেত্রে বিষয়টা একেবারেই উলটা, বয়ঃসন্ধি থেকে তাদের আড্ডার বিষয় হয় যৌনতা। এই বয়সেই তাঁরা নানা উপায়ে যৌনতা উপভোগ করা শুরু করে। এমন কি এটা তাদের জন্য এক ধরণের গর্বের বিষয়। বন্ধু আড্ডায় ´যৌনতায় অভিজ্ঞদের´ আলাদা কদর করা হয়।

যৌনতা বিষয়ে খুব বিপরীতমুখী ধারণা নিয়ে বেড়ে ওঠা ছেলে এবং মেয়েদের কাছে, যৌনতা উপভোগের বিষয়টা তাই খুব আলাদা। পুরো ব্যাপারটা হল সেই গল্পের মত,

একবার এক অন্ধকে জিগ্যেস করা হল, সে দুধ খাবে কিনা, তখন সে পালটা প্রশ্ন করল-

দুধ কেমন?

– একজন বলল সাদা

এবার অন্ধ জিগ্যেস করল, সাদা কেমন?

– লোকটা বলল বকের মত

অন্ধ আবার জিগ্যেস করল বক কেমন? লোকটা বলল,

– বটির মত,

এবার অন্ধ বলল, বটি কেমন? লোকটা বলল

– অনেক ধার, বটি দিয়ে তরকারি কাটে।

এবার অন্ধ ভয় পেয়ে বলল, তাহলে আমি দুধ খাবো না, দুধ খেলে গলা কেটে যাবে!

এটা নিছক গল্প হলেও বাঙালী মেয়েদের যৌনতা ভীতি ঠিক তেমন। তাই বলে তাদের যৌন চাহিদা মোটেও কমে যায়না। এই সামাজিক রীতিগুলো কী করে মেয়েদের যৌনতায় প্রভাব ফেলে, সে বিষয়ে আরো বিস্তারিত পড়তে চাইলে লেখার শেষ রেফারেন্সগুলো পড়ে দেখবেন।

এবার আসি একটা কমন অভিযোগ নিয়ে, রিসার্চ এর সময় আমাকে কতগুলো বাঙালী এমেচার ভিডিও থেকে ডাটা কালেক্ট করতে হয়েছে, অবাক হয়েই দেখলাম সেখানে বেশির ভাগ মেয়েই খুব নিষ্ক্রিয়। মাথায় প্রশ্ন ঢুকে গেল,

তাহলে কি বাঙালী মেয়েরা  সঙ্গমের সময় পুরুষের তুলনায় কম উত্তেজিত থাকে?

এর উত্তর দিয়েছেন ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর  লরি ব্রোটো। উনি ২০০৯ সালে ওনার The DSM Diagnostic Criteria for Hypoactive Sexual Desire Disorder in Women রিসার্চ পেপারে উল্লেখ করেছেন, নারী ও পুরুষের সঙ্গমের সময় উত্তেজনার মাত্রা একই থাকে। কিন্তু প্রকাশ ভিন্ন হতেই পারে, কারনটা তো  আগেই বললাম। সেই অন্ধের কাহিনী। যাইহোক, লেখার শেষে রেফারেন্স দেয়া হল দেখে নিতে পারেন।

লেখার শুরুতে বলেছিলাম, মেয়েদের যৌনতায় আগ্রহ নির্ভর করে পুরুষটি ´কে´, তার উপরে। বর্তমান রিসার্চরা চমৎকার একটা বিষয় নোটিস করেছেন। তারা দেখেছেন, মেয়েরা অনেক সময় তার প্রিয় পুরুষের কথা শুধু চিন্তা করেই অর্গাজমের আনন্দ উপভোগ করতে পারে, আবার কখনো কখনো খুব সুঠাম দেহের পুরুষের স্পর্শও তাকে যৌনতায় সক্রিয় করে না! এর কারন হল, মেয়েটি ঐ পুরুষের প্রতি ভালোবাসা বোধ করে না।

মেয়েরা যৌনতার ক্ষেত্রে ইমোশন কে আগে গুরুত্ব দেয়। ইমোশন বলতে শুধু প্রেম না, রাগ, ক্ষোভ, অভিমান, ঈর্ষা, তৃপ্তি,আনন্দ, দুঃখ এসব কেও বোঝায়। যেমন জেলাসি থেকেও সেক্স হয়। সেটাও এক ধরণের ইমোশন।

আচ্ছা আর একটা কথা খুব শুনি,  তা হল-

মেয়েরা তাড়াতাড়ি বুড়ো হয়ে যায়। একটা ছেলের যৌন ক্ষমতা ৭০ বছরেও থাকে কিন্তু মেয়েদের থাকে না। এখানে একটা বিশাল ফাঁকি আছে, সেটা হল বাচ্চা জন্ম দেবার ক্ষমতার সাথে সেক্স উপভোগের বিষয়টা গুলিয়ে ফেলা হয়েছে। এখানে খুব কৌশলে বিষয়টা চেপে যাওয়া হয়েছে কে গর্ভ ধারণ আর সঙ্গমের আনন্দ দুটো আলাদা বিষয়। সঙ্গমের আনন্দের বয়স অবশ্যই দীর্ঘ।

আচ্ছা পৃথিবীর সব চেয়ে বেশি বয়সী বারবনিতার বয়স কত আন্দাজ করতে পারেন? তার বয়স ৭৮ বছর। তার নাম চিনু। তাইওয়ানের এই নারী এই বয়সেও প্রচণ্ড ভাবে যৌনতায় সক্ষম।

গত ২৯ জুলাই ২০১০ সালে টেলিগ্রাফ একটা সংবাদ প্রকাশ করেছিল, গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, মধ্য বয়সী নারীরা অল্প বয়সী নারীদের তুলনায় যৌনতায় বেশি সক্রিয় থাকে (রেফারেন্স দেয়া আছে)।

 

গবেষকরা প্রমাণ করেছেন ৩১ থেকে ৫৪ বছরের নারীরা যৌনতায় সব চেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। তাই নারীর বয়স যৌনতার ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে না। বিষয়টা সম্পূর্ণ-ই নির্ভর করে  শরীর চর্চা ও শারীরিক সুস্থতার উপরে। যে নারী শরীর চর্চা করে কিংবা চর্চার সুযোগ পায়, তার যৌন ক্ষমতা ঠিকই থাকে।

খুব বেশি দূরে যাবার দরকার নেই, আমাদের পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই জয়া আহসান, পূর্ণিমা কিংবা প্রায় ৭০ বছরের ববিতাকে দেখেন। তাদের সৌন্দর্য এখনো আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

এই সমীক্ষাগুলো কে অনেকেই ব্যতিক্রম বলে উড়িয়ে দেবার চেষ্টা করবেন। তাদের জন্য আরও চমকপ্রদ তথ্য আছে। মহাভারতের ধ্রুপদী চরিত্রটির কথা মনে আছে? যার ছিল ৫ জন স্বামী? এই চরিত্রটির বাস্তব উদাহরণ হল, ভারতের উত্তরখাণ্ড এর দেরাদুন গ্রামে বসবাস করা নারী রাজো ভার্মা। তার পাঁচ স্বামী। যারা আপন পাঁচ ভাই। নিয়ম করেই স্বামীদের সঙ্গে সময় কাটে রাজোর। স্বামীরাও এক স্ত্রী নিয়ে মহা সুখে আছে। শুধু রাজোড় পাঁচ স্বামী তা নয়, এটা তাদের গাঁয়ের প্রাচীন রীতি। তার মায়ের ছিল তিন স্বামী।

নারীদের বহুস্বামী রাখার এই রীতি বহু পুরাতন রীতি। একে বলা হয় পলিয়েন্ড্রী।
তানজানিয়ার “নিম্বুই” সম্প্রদায়ের নারীরা তাদের ইচ্ছানুযায়ী পাঁচ বা ততোধিক স্বামী একত্রে রাখতে পারে। এক্ষেত্রে পুরুষের সাথে তাদের সম্পর্কের কোন সমস্যা হয় না।

পলিয়েন্ড্রী পরিবার

 

এছাড়া তিব্বত, ক্যানাডার আর্কটিক, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, ভারতের লাদাখ ও ঝাড়খণ্ড, কেনিয়া, তানজানিয়া, অ্যামাজনের জো উপজাতিরা, ভেনিজুয়েলা এবং আর কয়েকটি পোলিনেশিয়া সমাজে এই ধরনের বিবাহ সামাজিক ভাবেই স্বীকৃত। চীনের মঙ্গোলীয় অঞ্চলে মসোউ গোষ্ঠী, সাহারা আফ্রিকা ও আমেরিকার উপজাতিদের মাঝেও এই রীতি রয়েছে।

তিব্বত, চীন ও তাঞ্জানিয়ার কয়েকটি আদিবাসী সম্প্রদায়েও এই প্রথা চালু রয়েছে। একে বলা হয় “ফ্রেটারনিটি পলিয়েন্ড্রী”।

 

 

 

এই ধরনের বিয়েতে নারী কেবল মাত্র সহোদর ভাইদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এছাড়া ভেনিজুয়েলার বারী ক্ল্যান সম্প্রদায়ের নারীরা সামাজিক ভাবে একই সাথে দুজন পুরুষকে বিয়ে করে এবং দুজনেই সামাজিকভাবে সন্তানের পিতার মর্যাদা পেয়ে থাকে।

অ্যামেরিকার এবিসি নিউজ ২০১১ সালে এমন একটি পরিবারকে নিয়ে রিপোর্ট করে, যেখানে দেখানো হয় জায়া তার দুই স্বামী জন, ইয়ান এবং তাদের দুই বছরের ছেলে এইমেন কে নিয়ে একই ছাদের নীচের বাস করছে দুই বছরের বেশী সময় ধরে। এবং তারা যথেষ্ট সুখী।

নারীর যৌনতা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে অসংখ্য তত্ত্ব উপাত্ত আছে। নারী যে পুরুষের চেয়ে যৌনতায় বেশি সক্রিয় এর অসংখ্য প্রমাণ আছে। সেক্স ডিফারেন্স ইন সেক্সচুয়াল ফ্যান্টাসি বইটি তে লেখক ও গবেষক, এলিস স্যামন্স উল্লেখ করেছেন, যৌন ক্ষেত্রে নারীরা অনেক সময় পুরুষের তুলনায় ৭ গুণ বেশি সক্রিয় থাকে!

আর একটা প্রশ্ন আমাকে গতবছর এক ভদ্রলোক করেছিলেন, উনি জানতে চেয়েছিলেন, এক সময় রাজা বাদশাহদের হেরেম থাকতো, সেখানে শতশত নারী থাকত সেই সব ক্ষমতাধর পুরুষদের যৌন প্রমোদের জন্য।  সুতারং বোঝাই যায়,পুরুষের যৌন চাহিদা অনেক বেশি, নারীরা কেন রাখত না, কিংবা রাখে না?

উত্তর হল নারীরা বহুপুরুষের সাথে সাধারণত সঙ্গমে আগ্রহী হয় না, তার কারন তারা প্রেম মানে হৃদয় ঘটিত বিষয়টাকে গুরুত্ব দেয়। তাছাড়া সামাজিক কারনও রয়েছে। তবে নারীদের যৌনাসক্তির প্রচুর উদাহরণ আছে। রোমান রানীদের যৌনাসক্তির কথা তো জগত বিখ্যাত।

রোমান রানী ভ্যালেরিয়া ম্যাসালিনা ছিল তাদের মধ্যে সব চেয়ে বেশি আলোচিত । বলা হয় তার প্রথম স্বামী রোমান সম্রাট ক্লডিয়াস এর ধ্বংসের কারণ ছিল ভ্যালেরিয়ার এই অতিরিক্ত যৌনাসক্তি। স্বামী ক্লডিয়াস যখনই বাইরে যেতেন ভ্যালেরিয়া তখন প্রাসাদ থেকে বের হয়ে অপরিচিত পুরুষদের সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হতেন, এবং নাগালের মধ্যে যত পুরুষ পাওয়া যায় তত পুরুষের সাথেই সঙ্গম করতেন। শেষ পর্যন্ত এই রানী নিজেকে বারবনিতায় পরিণত করেছিলেন।

 

অবশ্যই বারবনিতা হওয়াটা তার জন্য মোটেও অর্থ উপার্জনের পথ ছিল না। বরং এই বেশ্যাবৃত্তি শুধুই যৌন চাহিদা পরিপূর্ণ করার উপায় ছিল।

বেশ্যালয়ের সব চেয়ে জনপ্রিয় নারী ছিল সিসিলিয়া। একদিনে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পুরুষের সাথে সঙ্গম করার রেকর্ডটি ছিল তার। তাই ভ্যালেরিয়া একবার বেশ্যালয়ে একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। সিসিলিয়া নাকি ভ্যালেরিয়া, দুজনের মধ্যে এক দিনে যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পুরুষের সাথে সঙ্গম করতে পারবে সে-ই হবে বিজয়ী । ১৫ জনের পরই সিসিলিয়া হার মেনে নিয়েছিল কিন্তু ভ্যালেরিয়া ২৫ পার করেও ক্লান্ত হয়নি, বরং না থেমে ব্রথালয় বন্ধের আগ পর্যন্ত সে তার কাজ চালিয়ে গেছে। কোন সন্দেহ নেই সেই বিজয়ী হয়েছিল। ভ্যালেরিয়া যখন তার দ্বিতীয় বিয়েটি করে, তখন সে জনসম্মুখে তার দ্বিতীয় স্বামীর সাথে যৌনতায় লিপ্ত হয়। এই রানী এক কথায় ‘শি উলফ’ ছিল। ভ্যালেরিয়ার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল সেক্স!!

ভ্যালেরিয়াকে ইতিহাস মনে রেখেছে শুধুই তার যৌনতার প্রতি এই প্রবল আসক্তির জন্য।

যৌনাসক্তি-ই তার সব চেয়ে বড় পরিচয়। অবশ্য এক দিনে নন স্টপ সঙ্গম করার রেকর্ডটি ভ্যালেরিয়ার নয়, এটি জয় করেছিল মার্কিন পর্নস্টার লিসা স্পারাক্স। সে এক দিনে ৯১৯ জনের সাথে সঙ্গম করে এই বিশ্ব রেকর্ডটি করেছিল। তাই নারীর যৌন চাহিদা কম কিংবা আগ্রহ কম এই সব এখন শুধুই মিথ।

এখানে একটি প্রশ্ন করা যায়, যৌনতার ক্ষেত্রে মেয়েদের মন আগে জাগতে হলে,  রোমান রাণীর মন জাগা বা শরীর জাগার ব্যাপারটা কীভাবে ব্যাখ্যা করা যায়?

উত্তর হল, এই মনস্তাত্ত্বিক বিষয়গুলো এক লাইনে কিংবা একটা প্যারায় বর্ণনা দেয়া সম্ভব না, এর সাথে সমাজ , পরিবার, পরিবেশ, ক্ষমতা, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, এবং জিনগত বৈশিষ্ট্যও জড়িত। রোমান নারীরা যে পরিবেশে বেড়ে উঠেছিল সেখানে যৌনাকাঙ্ক্ষার অনুকূল পরিবেশ ছিল , তাদের জীবনাচার তাদের প্রভাবিত করেছিল, সেই সাথে ক্ষমতা প্রকাশের একটা মাধ্যম ছিল যৌনতা সেটাও তারা শিখেই বড় হয়েছে । তাছাড়া তাদের শারীরিক ভাবে নারী বলা হলেও মানসিক ভাবে তারা ক্ষমতাধর পুরুষ মানসিকতা লালন করত। তাই তাদের যৌন চিন্তা সাধারণের সাথে মেলানো যাবে না।

তাই তাদের ইমোশন কীভাবে কাজ করত সেটা নিশ্চিত ভাবে বলার কোন উপায় নাই।

আবার যদি পলিয়েন্ড্রী সমাজ ব্যবস্থার কথা বলি সেখানে তাদের কাছে সম্পর্কের চেয়ে প্রথা মুখ্য , আমরা এখনো জানি না তাদের যৌনাচারনে ফ্যাক্টগুলো ঠিক কি কি আর সেটা ঠিক কীভাবে কাজ করে , যেমন , মসোউ গোষ্ঠীর নারীরা তাদের স্বামীদের প্রতি খুবই বিশ্বস্ত থাকে আবার বারী ক্ল্যান সম্প্রদায়ের নারীরা স্বামী বদল করতে পারে। এদের জীবনাচরণ, বেঁচে থাকার কৌশল কিংবা পরিবেশ তাদের ইমোশনের উপরে প্রভাব ফেলে বলা যায় ,তারপরেও পুরোপুরি নিশ্চিত ভাবে বলার উপায় নেই কারন এখনো এই সব মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যাগুলো হাইপোথিসিস এর পর্যায়ে আছে।

 

”ঈশ্বর নারী কে যৌন ক্ষমতা দিয়েছেন”

মাঝে মাঝে এডউইন লুয়িস কোলের মত ধর্ম প্রসারকদের মুখ ফসকে সত্যিটা বের হয়ে যায়। যদিও ধর্ম গ্রন্থগুলো নারীকে যৌনতা উপভোগের কোন বিধান দেয়নি। কোথাও বলা হয়নি স্ত্রী যদি যৌনতায় সন্তুষ্টি লাভ না করে তবে স্বামীর পাপ হবে। অথচ নারীদের ক্ষেত্রে উল্টা। তাদের একমাত্র কাজ স্বামীর যৌনতার আনন্দটুকু নিশ্চিত করা।

সেখানে স্বামী অক্ষম হলেও স্বামী কে ছেড়ে যাবার অধিকার নারীকে দেয়া হয়নি।

 

আমাদের সমাজে যৌনতা শব্দটাই নিষিদ্ধ তার উপরে কোন নারী যদি যৌনতার কথা বলেই ফেলে,  তবে তাকে কী বলে সম্বোধন করা হয় সে কথা কারোর-ই অজানা নয়। নারী আসলে পুরুষের তুলনায় যৌনতায় কখনোই পিছিয়ে ছিল না। তারা  প্রচণ্ড ভাবেই এই বিষয়ে আকর্ষণ বোধ করে কিন্তু বেশ্যা, বারবনিতা ট্যাগ এবং সামাজিক শাস্তির ভয়ে নিজের ভেতরে প্রচণ্ড একটা দেয়াল তুলে রাখে, আর পুরুষেরা সেই সুযোগে নিজের যৌনতা প্রবণ, যৌনতা কামী প্রমাণ করে তাদের একাধিক নারী কামনাকে জায়েজ করে নেয়।

 

 

রেফারেন্স 

(Brotto LA. The DSM diagnostic criteria for hypoactive sexual desire disorder in women. Arch Sex Behav. 2010;39:221–39)

(Levine SB. An essay on the nature of sexual desire. J Sex Marital Ther. 1984;10:83–96.)

https://www.telegraph.co.uk/news/science/science-news/7914766/Middle-aged-women-more-sexually-active.html

https://www.bbc.com/future/article/20160630-the-enduring-enigma-of-female-desire

https://www.jsm.jsexmed.org/article/S1743-6095(15)30733-5/fulltext

 

 

১ টি মন্তব্য

  1. সুন্দর লিখনি,
    সহজ ভাষায় বুঝানো হয়েছে,,
    আমিও তাই মনে করি মেয়েরা যৌনতায় আবেগী হয় মনেের দিকটা থেকে,, পুরুষের বিশ্বাসের উপর,, অনুভূতির উপর,,
    তাদের কাছে পুরুষেরঅনুভুতিটায় সব,, যে পুরুষ যে নারীর হৃদয় ছুঁয়েছে সে অনায়াসে সে নারীর শরীর ছুঁতে পারে,,

কমেন্ট বন্ধ করা হয়েছে